স্বদেশ ডেস্ক:
পঁয়ষট্টি দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারেননি জেলেরা। গত ২৩ জুলাই থেকে অনুমতি মিললেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর থেকে ফিরে আসতে হয়েছে কয়েকবার। তবে গত সপ্তাহ থেকে জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। বড় সাইজের মাছে জেলেদের মুখে তাই হাসি। তবে দাম শুনে মুখ ভার ক্রেতাদের।
ফাঁকা থলে নিয়েই ফিরতে হচ্ছে বাজার থেকে। ইলিশের ভরা মৌসুমেও প্রতি কেজির দাম হাঁকা হচ্ছে এক হাজার থেকে এগারোশ টাকা পর্যন্ত। তবে বোট মালিকরা বলছেন, দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় মানুষের চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী মাছ ধরা পড়ছে না। এ ছাড়া বন্যায় পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় সামুদ্রিক মাছের বাড়তি চাহিদাও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। সামনে ইলিশের দাম কমবে বলে আশা তাদের।
গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরে চট্টগ্রাম নগরীর ফিশারি ঘাটে নামানো হয়। সেখান থেকে তা নিয়ে যান চট্টগ্রাম নগরী, আশপাশের জেলা-উপজেলার বিক্রেতারা। এ ছাড়া নগরীর পতেঙ্গা, কাট্টলিসহ কয়েকটি ঘাটে মাছ নিয়ে আসেন স্থানীয় জেলেরা।
গতকাল শুক্রবার এসব ঘাটে সব জেলের নৌকাতেই ছিল প্রচুর ইলিশ। ফিশারি ঘাটে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে জাল ফেলতেই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। মাছ ধরার বোট ও ট্রলার ভরে যাওয়ায় ঘনঘন ঘাটে আসতে হচ্ছে। ফলে জেলে-ফিশিং ট্রলার মালিক ও মৎস্য আড়তদাররা বেশ খুশি। এ ছাড়া চট্টগ্রামের জেলে পল্লীগুলোয়ও এখন আনন্দের বন্যা।
ফিশারি ঘাটে দেখা গেছে, ইলিশভর্তি নৌকা নিয়ে সাগর থেকে ফিরছেন জেলেরা। আড়তে তুলতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বড় আকারের ইলিশ। সেখান থেকে মাছ পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে দাম কমেনি। সোনালি যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল আমাদের সময়কে জানান, গতকাল ঘাটে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
৩০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ছিল ৪০০ টাকা কেজি। তবে নগরীর কাজির দেউড়ি, চকবাজার, বহদ্দারহাট, কর্ণফুলী বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ (এক কেজির বেশি ওজনের) বিক্রি হয়েছে এক হাজার থেকে এগারশ টাকায়। ফলে গতকাল বাজারে গিয়ে বড় আকারের ইলিশ দেখে কেনার ইচ্ছা থাকলেও দাম শুনে ফিরতে হয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের।
নগরীর বহদ্দারহাটে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ মাছ ১১০০ টাকা দাম হাঁকার কারণে ইচ্ছা থাকার পরও না কিনে ফিরে যান স্থানীয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ভরা মৌসুমে যদি এক হাজার টাকা দাম হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ ইলিশ খাবে কেমনে?’ দাম বেশি থাকার কারণ হিসেবে বিক্রেতা বাবুল বলেন, ‘দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ ছিল। ফলে মানুষ ইলিশ মাছ খেতে পারেনি। তাই এখন চাহিদা বেশি। আবার জেলেদের চাহিদা অনুযায়ী ধরা পড়ছে না। ফলে দাম কিছুটা বেশি। তবে জেলেরা জানিয়েছেন, সাগরে কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। এসব ইলিশ আকারেও বড়।’
মৎস্য বিভাগ বলছে, বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ইলিশের গতিপথ। মৌসুমজুড়ে এবার ইলিশের সরবরাহ থাকবে। নিষেধাজ্ঞার সুফল পেতে শুরু করেছেন জেলেরা। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ছে। বন্যার কারণে চাষের মাছ ভেসে গেছে। দেশীয় মাছের সংকট তৈরি হওয়ায় সামুদ্রিক মাছের দাম একটু বেশি। যখন আরও বেশি ধরা পড়বে, তখন হয়তো দাম কিছুটা কমবে।’ মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ পর্যবেক্ষণ সেলের হিসাবে, ১৫ বছর আগে দেশের ২৪টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণ ছিল। এখন দেশের অন্তত ১২৫টি উপজেলার নদীতে ইলিশ বিচরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।